+880 1521-203767
(Whatsapp,
Imo,
Viber)
১৯৭২ সাল। সদ্য স্বাধীন দেশ। চারদিকে বিজয়ের আনন্দ, উল্লাস। একই সঙ্গে ঘরে ঘরে স্বজন হারানোর বেদনা। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার রাষ্ট্রের হাল ধরেছে। কিন্তু গণমানুষের আকাশ-ছোঁয়া আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না-তৈরি হচ্ছে সংকট। এ এক অস্থির সময়। বিশ্বজুড়ে আধিপত্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আর সমাজতন্ত্রের পক্ষে তরুণেরা সোচ্চার হচ্ছে, বিক্ষোভ করছে, অস্ত্র হাতে লড়ছে। তারা নিজেদের সঁপে দিচ্ছে বিপ্লবের পিচ্ছিল পথে। ভিয়েতনাম আর কিউবা দিচ্ছে প্রেরণা। সেই স্বপ্ন আর দ্রোহ ছুঁয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ মন। নানান ঘটনা-দুর্ঘটনায় সারা পৃথিবী টালমাটাল। বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী ও পরাশক্তিগুলোর সম্পর্কেও তৈরি হচ্ছে টানাপোড়েন। তার ঝাপটা এসে লাগছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দারুণ। কিন্তু কয়েক-মাসের মধ্যেই দেখা গেল বিভাজনের রাজনীতি, যা মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকটাই চাপা পড়েছিল। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছিল দেশের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন। এটি দু-ভাগ হয়ে যায়। একটি গ্রুপ ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের অনুগত থাকে। অন্য গ্রুপটি তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মশাল জ্বালায়। ক্রমে তারা হয়ে ওঠে দেশের প্রধান সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি। সরকার যত কর্তৃত্ববাদী হয়, বিরোধিতার পারদ ততই চড়তে থাকে। রাজপথ হয়ে ওঠে উত্তপ্ত। ধীরে ধীরে দেশে ধেয়ে আসে রাজনৈতিক সংকট। একপর্যায়ে জারি হয় জরুরি অবস্থা। মৌলিক নাগরিক অধিকার স্থগিত হয়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই ইতি ঘটে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার। স্বাধীনতার তিন বছরের মধ্যে এবং সংবিধান জারি হওয়ার দুই বছরের মধ্যে সংবিধানের খোল-নলচে পাল্টে যায়। চালু হয় রাষ্ট্রপতিশাসিত একদলীয় সরকার ব্যবস্থা। বাংলাদেশে তখন মূলধারার বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা। বেশিরভাগই সরকারি মালিকানার। এগুলোর মধ্যে আছে দৈনিক বাংলা, পূর্বদেশ, দ্য বাংলাদেশ অবজার্ভার আর মর্নিং নিউজ। বাংলার বাণী, বাংলাদেশ টাইমস আর জনপদ ব্যক্তিমালিকানার কাগজ হলেও মালিকেরা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। একসময় সংবাদ এবং ইত্তেফাক ছিল বিরোধী দলের মুখপত্র। রাজনৈতিক সমীকরণে সংবাদ হয়ে পড়ে সরকার সমর্থক। ইত্তেফাক ছিল এই ধারার বাইরে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে সরকারবিরোধী দৈনিক ছিল না। বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি ঢাকায় জন্ম হয় একটি বাংলা সাপ্তাহিকের। নাম গণকণ্ঠ। একই বছর ২১ ফেব্রুয়ারি এটি দৈনিকে রূপান্তরিত হয়। ধীরে ধীরে এটি হয়ে ওঠে বিরোধী দলের মুখপত্র। দেশ-সমাজ ও রাজনীতি সম্পর্কে সরকারি বয়ানের বিপরীতে গণকণ্ঠ হয়ে ওঠে সরকারবিরোধী প্রধান প্ল্যাটফরম। জনমানসে এটি তখন একমাত্র বিরোধীদলীয় দৈনিক। কাগজে-কলমে না হলেও বাস্তবে এটি ছিল জাসদের মুখপত্র। বাহাত্তরের জানুয়ারিতে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয় সরকারের নবযাত্রা। নভেম্বরের মধ্যেই তৈরি হয়ে যায় সংবিধান। চালু হয় সংসদীয় গণতন্ত্র। চুয়াত্তরের শেষে এই ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। পঁচাত্তরের জানুয়ারিতে একদলের শাসন চালু হয়। এ সময়ের একটি ছবি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে এ বইয়ে, গণকণ্ঠ পত্রিকার চোখে। সরকারি হামলার কারণে গণকণ্ঠ প্রায়ই বন্ধ থাকত। তেহাত্তরের ৭ মার্চ সাধারণ নির্বাচনের পর গণকণ্ঠকে তার অফিস থেকে উৎখাত করা হয়। নতুন ঠিকানায় যাওয়ার আগে বেশ কিছুদিন পত্রিকা বন্ধ থাকে। বিজ্ঞাপন পাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। চুয়াত্তরের ১৭ মার্চ গণকণ্ঠ সম্পাদক আল-মাহমুদ গ্রেপ্তার হয়ে গেলে পত্রিকাটি কয়েকদিন বন্ধ থাকে। পরে চালু হলেও প্রতিদিন চার পাতা এবং মাঝে মাঝে ছয় পাতার কাগজ বের হতো। এমনকি দুই পাতার কাগজও বের হয়েছে কোনো কোনো দিন। পঁচাত্তরের ২৭ জানুয়ারির পর পত্রিকাটির কোনো সংখ্যা পাওয়া যায় না। এটি ওই সময় নিষিদ্ধ হয়েছিল। দেশে তখন জরুরি অবস্থা। সম্পাদক তখনও বিনা বিচারে কারাগারে বন্দি। দেশে একদলীয় সরকার একদিনে বা রাতারাতি আসেনি। এটি এসেছে ধীরে-ধীরে, ধাপে-ধাপে, কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির অনুষঙ্গ হিসেবে। এ সময় জুড়ে আমরা চারদিকে দেখি বিক্ষোভ-আন্দোলন, নির্যাতন আর সন্ত্রাস। বইটি এ সময়ের একটি দলিল। এ বইয়ে ঘটনাপঞ্জি কালানুক্রমে সাজানোর চ্ষ্টো হয়েছে। সময়টিকে তুলে ধরা হয়েছে নয়টি অধ্যায়ে। প্রতিটি অধ্যায় একটি বিশেষ ঘটনা বা প্রক্রিয়াকে ঘিরে। এগুলোর মধ্যে যোগসুত্র আছে। ঘটনাগুলো ছিল পরিস্থিতি ও পরিবর্তনের নিয়ন্ত্রক বা নিয়ামক। তার চূড়ান্ত পরিণতি হলো একদলীয় সরকার। এখানে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে গণকণ্ঠ পত্রিকার ভাষ্য ও বিশ্লেষণ। এটিকে পত্রিকাটির নানান সংবাদ ও প্রতিবেদনের একটি সংগ্রহ বা সংকলন হিসেবেও দেখা যায়, যেসব আমি এক সুতোয় বেঁধেছি। গণকণ্ঠ যেহেতু একটি বিশেষ দলের ও বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের মুখপত্র ছিল, সেক্ষেত্রে এর বয়ান একপেশে মনে হতে পারে। তবে এর বিপরীতে অন্যান্য ভাষ্য পাওয়া যায় ওই সময়ের ক্ষমতাসীন দল ও তার সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে থাকা খবরের কাগজগুলোয়। ওই টালমাটাল সময়টিকে বুঝতে হলে সবগুলো ভাষ্যই মিলিয়ে দেখা দরকার। গ্রন্থিক প্রকাশন আমার জন্য খুলে দিয়েছে নতুন একটি দ্বার। এর স্বত্বাধিকারী রাজ্জাক রুবেল-এর আগ্রহ ও সহযোগিতায় এটি লেখা হলো। এ বই পাঠককে নিয়ে যাবে সত্তর দশকের: এক অস্থির সময়ে।
Tk.
380
285
Tk.
460
345
Tk.
1300
975
Tk.
700
525
Tk.
600
450
Tk.
180
108
Tk.
150
123
Tk.
400
300
Tk. 80
Tk.
110
99