শাহ্ মোস্তফা খালেদ লিখিত ভারত ভ্রমণের দিনলিপি একটি অসাধারণ ভ্রমণ কাহিনী। গ্রন্হাকার শাহ্ মোস্তফা খালেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে অধ্যাপনা করেন। ইতিপূর্বেই তার কিছু লেখা পরেছি, অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও সাবলীল। বিজ্ঞানের ছাত্র, তাও আবার কম্পিউটার বিজ্ঞানের। আজকের জগতে কম্পিউটার বিজ্ঞান সব কিছুকে হার মানিয়ে দিচ্ছে। এখানে সৃষ্টি কুশলতার কোনো অন্ত নেই। শাহ্ মোস্তফা খালেদ ও তার স্ত্রী দুজনে একসঙ্গে এই ভ্রমণে অংশ নেন। এই ভ্রমণ কাহিনীতে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ রয়েছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তারাই মুখ্য। কিন্তু এর ফাঁকে ফাঁকেই শাহ্ মোস্তফা খালেদের রোমান্টিকতা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে তার লেখায়। গদ্য আকারে ভ্রমণ কাহিনী লেখা হলেও লেখার সর্বত্রই বেশ একটা ছন্দ এবং কাব্যিক ভাব রয়েছে। প্রকৃতি, মানুষ, ইতিহাস ইত্যাদি নানা বর্ণে, নানা ভাবনায় চিত্রিত হয়েছে এই ভ্রমণ কাহিনীতে। কখনো কখনো মনে হয়েছে, লেখক গল্প বলছেন। ভ্রমণ কাহিনীতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ই ছিলেন একে অপরের প্রতি সংবেদনশীল। উভয়ের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া কখনো কখনো কাব্যিক ছোঁয়া পেয়েছে। রয়েছে ছাত্রছাত্রীদের জন্য ভাবনা। ছাত্রছাত্রীদের প্রতি শাহ্ মোস্তফা খালেদের মমতা ও স্নেহের যে কোনো পরিমাপ নেই, এই ভ্রমণ কাহিনীতে তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। নিজেও আমি ভারত ভ্রমণ করেচি। ১৯৮৩ সালে ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ভারতের শ্রেষ্ঠ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তৃতা করতে হয়েছিল। সেই সুবাদে তিন মাস ভারতের প্রায় সর্বত্রই ভ্রমণ করতে হয়েছে। মিশতে হয়েছে সেখানকার জনজীবনের সঙ্গে। শাহ্ মোস্তফা খালেদ যেসব স্থানে বেড়িয়েছেন, তার প্রায় সব জায়গায় আমিও গেছি। কিন্তু এমন অসাধারণ নিখুঁত কাব্যিক, সরস এবং রোমান্টিক বর্ণনা আমি অন্য কোনো ভ্রমণ বৃত্তান্তে পাই নি। প্রতিটি বর্ণনা আকর্ষণীয় শুধু নয়, মরমীয় এবং জীবন্ত হয়েই পাঠকের কাছে ধরা পড়ে। কখনো কখনো মনে হয়েছে শাহ্ মোস্তফা কালেদ শব্দ নিয়ে খেলছেন। আমি অবাক হলা, কী অপরিসীম দক্ষতায় লেখার মাধুর্যে তিনি নিজের ভ্রমণ কাহিনীকে অসাধারণ ব্যঞ্জনায় ফুলের সৌরভ এনে দিয়েছেন প্রতিটি বৃত্তান্তে। আমি নিজেও লিখি। কিন্তু শাহ্ মোস্তফা খালেদের লেখা পড়ে আমিও অভিভূত। তরুণ বয়সে যাযাবর (বিনয়মুখোপাধ্যায়* ছিলেন আমার প্রিয় লেখক। এখনো তার ‘দৃষ্টিপাত’ আমাকে টানে। সৈয়দ মুজতবা আলীর নানা সরস বর্ণনা আমাকে পুলকিত করতো। গল্পে সুবোধ ঘোষের মিষ্টি মাধুর্য ও রোমান্টিকতায় আমি মুগ্ধ হতাম। নিজেও একসময় কিছু গল্প-কবিতা লিখেছি, সেসব প্রকাশিতও হয়েছে। কিন্তু গবেষণায় নিয়োজিত হওয়ায় সব ভাবনা সুদূরে মিলিয়ে গেছে। শাহ্ মোস্তফা খালেদের লেখা পড়তে গিয়ে যেন আমার সেই তরুণ বয়সের ভালোলাগা ফিরে এল। আগ্রা, তাজমহল, আজমির শরিফ, যমুনা, বৃন্দাবন, পুরী, কোণার্ক, ভুবনেশ্বর, মাদ্রাজের সমুদ্রতট, ব্যাঙ্গালোরের বৃন্দাবন গার্ডেনস, হায়দ্রাবাদ, বর্তমান মুম্বাই, দিল্লি, কাশ্মীরসহ নানা স্থানে ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়েছিল ভারত সরকার। তাজমহল সম্রাট শাহজাহানের এক অসাধারণ প্রেমের অপরূপ শিল্পকর্ম। মমতাজকে তিনি ভালোবাসতেন। ভালোবাসার এমন নন্দিত কবিতা যে পাথরেও পরিস্ফুট হতে পারে, তা বোধকরি সম্রাট শাহজাহানই প্রথম ও শেষ। জন ডান মেটাফিজিক্যাল কবিতায় ভালোবাসার দৈহিক ও আ্যধাত্মিক ভাবনার মেলবন্ধন করেছেন। কিন্তু শাহজাহানের তাজমহল কবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। শাহ্ মোস্তফা খালেদের লেখনীতে তাজমহলকে কেন্দ্র করে সম্রাট শাহজাহানের চেতনা যেন আবারও ফিরে পেয়েছি। আমার ভ্রমণকালে ট্রেন-বাস যখন যেটা পেয়েছি, তাতেই পরিবার নিয়ে ভ্রমণ করেছি। কাশ্মীরের ডাল লেক-এর উপর হাউস বোটে দিন কাটানোর কথাও মনে পড়ছে। কিন্তু শাহ্ মোস্তফা খালেদের বর্ণনায় আমার সেদিনের ভারত দর্শন কী অবাক করা নিপুণ ভাষার কারুকার্যে একেবারে জীবন্ত হয়ে ফিরে এল! মনে হলো, আমি বুঝি শাহ্ মোস্তফা খালেদের সহযাত্রী। প্রতিটি শব্দে ছবি ফুটে উঠেছে, পড়তে চমৎকৃত হতে হয়। লেখাটি অনেকাংশে ডায়েরির আদলে মনে হলেও শাহ্ মোস্তফা খালেদের লেখায় শুধু যে ভ্রমণ বৃত্তান্ত পড়েছি তা নয়, একজন সুদক্ষ সাহিত্যিকের সুন্সিয়ানাও ফুটে উঠেছে তার লেখায়। রোমান্টিক যুগল দম্পতির চলমান বাস ও ট্রেনে যেতে যেতে একে অপরের প্রীতিময়তা ছাত্রছাত্রীদের দৃষ্টি এড়িয়ে পাঠকের চোখও ধরা পড়েছে। কোনো কোনো সময়ে বাক্য গঠনের রঙ্গরস তার বর্ণনায় শিল্প সুষমায় ভরে উঠেছে। ধারাটি ধরে রাখতে পারলে বাংলা সহিত্যে এই সাহিত্যকর্মটি নতুন সংযোজন হতে পারে। শাহ্ মোস্তফা খালেদের অধ্যাপনা শুধু যে ক্লাসেই সীমাবদ্ধ রয়েছে, তা বুঝি নয়, লেখা পড়ে মনে হয়েছে, ক্লাসের বাইরেউ তার অধ্যাপনা ছাত্রছাত্রীদের মনে শিক্ষার এক নান্দনিক কুশলতা ও আবীর ছড়াতে সক্ষম হয়েছে। শাহ্ মোস্তফা খালেদ আমাদের সাহিত্যে এক নতুন চমক এনেছেন তার এই ভ্রমণ বৃত্তান্তে। উত্তরাধিকার সূত্রে ধরে বলতে গেলে তার দাদি ছিলেন কবি। পিতা সাংবাদিক এবং গবেষক। মা অর্থনীতির অ্যধাপক। এ ছাড়াও পারিবারিক উত্তরধিকারে সংস্কৃতি-ভাবনা নানা চিত্রে-বিচিত্রে তার কাছে প্রতিভাত হয়েছে। আগামীতে তার থেকে আরো লেখা প্রত্যাশা করি।
Tk.
350
263
Tk.
600
450
Tk.
470
353
Tk.
300
225
Tk.
180
135
Tk.
90
67
Tk.
130
88
Tk.
1500
900
Tk.
200
150
Tk.
150
123