+880 1521-203767
(Whatsapp,
Imo,
Viber)
আমরা যারা গত শতকের শেষের দিকে জন্ম নিয়েছি তারা সাবেক সোভিয়ত ইউনিয়ের পতনের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এক কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় বেড়ে উঠেছি। আমাদের শৈশব আর কৈশোর কেটেছে বিশ্বব্যবস্থায় আমেরিকার একক আধিপত্য আর কর্তৃত্ব দেখতে দেখতে। আমাদের প্রজন্মটি যখন যৌবনে অর্থাৎ একবিংশ শতকের প্রথম দশকে পা রাখে তখন আমেরিকার নেতৃত্বে গোটা বিশ্বে চাপিয়ে দেওয়া বেশ কয়েকটি নৃশংস যুদ্ধের ভয়াবহতা খুব কাছ থেকে আঁচ করে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় সংঘটিত হয় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। এ হামলার অজুহাতে একই বছরের ৭ অক্টোবর মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে আফগানিস্তানে হামলা শুরু করে। আফগানিস্তানে যুদ্ধ যখন চলমান এমতাবস্থায় ২০০৩ সালের ২০ মার্চ রাসায়নিক অস্ত্রের মিথ্যা অজুহাতে ইরাকে সর্বাত্মক হামলা চালায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট। আমেরিকা যখন শক্তি প্রয়োগ করে একের এক দেশ ধ্বংসের খেলায় মত্ত তখন ভøাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে রুশরা অতীনের গøানি ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত। মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বের একক আধিপত্যের বিরুদ্ধে রাশিয়া বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে। ২০০৮ সালের ৮ আগস্ট পুতিন জর্জিয়ার আবখাজিয়া ও দক্ষিণ ওশেটিয়ায় হামলা করে অঞ্চল দুটিকে রাশিয়ার মূল ভ‚খÐের সাথে একীভ‚ত করে। পরে ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি ইউক্রেনের কৌশলগত ক্রিমিয়া দখল করে সেখানে রাশিয়ার কর্তৃত্ব স্থাপন করে। গোটা বিশ্ব যখন ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে, পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যকার ক্ষমতার দ্ব›দ্ব যখন ধীরে ধীরে তীব্র হচ্ছে ঠিক তখই ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর আরববিশ্বে শুরু হয় তথাকথিত আরব বসন্ত। আরব বসন্তের অনলে একে একে পুড়ে ছারখার হয় লিবিয়া, মিসর ও সিরিয়া এবং অশান্ত হয়ে ওঠে আরববিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। শুধু গত দুই দশকেই নিহত হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ এবং বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে কয়েক মিলিয়ন মানুষ। গোটা পৃথিবী যখন অশান্ত, শোকে-তাপে মুহ্যমান, মানুষেরা শান্তির সন্ধানে স্বদেশ ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিচ্ছে, ঠিক তখনই আরেকটি ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে বিশ্ব। বর্তমানে ইউক্রেনে চলছে রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্বের শক্তির লড়াই। গোটা পৃথিবীতে যখন পরাশক্তিগুলোর চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের ফলে বিশৃঙ্খলা, অশান্তি ও অরাজকতা বিরাজ করছে তখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভ‚মিকা পালন করে আসছে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ নামক যে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় সেটি যেন আজ পরাশক্তিদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ তার প্রতিষ্ঠার সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিশ্ববাসীর গুরুত্বপূর্ণ কোনো সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে পারেনি। পক্ষান্তরে পরাশক্তিগুলো বরাবরই এ প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজ নিজ স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী শক্তিগুলোর দ্বারা তাদেরই জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে গঠিত এ প্রতিষ্ঠানটির সংস্কারের দাবি তাই দীর্ঘদিন ধরে উত্থাপিত হয়ে আসছে। সাথে সাথে ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ বণ্টনের দাবিও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে তুলে ধরা হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে যেসব নেতা বিশ্বব্যবস্থার এসব অসংগতি নিয়ে সরব ভ‚মিকা পালন করছেন তাদের মধ্যে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান অন্যতম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখী নীতি, মুসলিম বিশ্বের প্রতি বৈষম্য, পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ হত্যা, মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, শরণার্থীদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর আচরণ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নীরবতা, পরাশক্তিদের পক্ষে পক্ষপাতিত্বসহ চলমান অন্যায়-অনিয়ম, বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছেন। তিনি আন্তর্জাতিক এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের জন্য বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে এগুলোকে ঢেলে সাজানোর দাবি করছেন। এ প্রেক্ষাপটে তিনি ‘পৃথিবী পাঁচের চেয়ে বড়’ দাবি করে বর্তমান বৈষম্যপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থাকে সংস্কারের মাধ্যমে আরো ন্যায়সংগত একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার আহŸান জানাচ্ছেন। এ বইয়ে তিনি ন্যায়ভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি বাস্তবসম্মত রূপরেখা তুলে ধরেছেন। তুরস্কের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান একবিংশ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি মূলত তুর্কিশ ভাষায় বইটি লিখেছেন। এরপর পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সাতটি ভাষায় এটি অনূদিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় বইটি পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার এটি প্রথম প্রয়াস। বইটি মূলত এরদোয়ানের বিভিন্ন সময় দেওয়া বক্তব্যের সারাংশ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার সংস্কার সম্পর্কিত যেসব দাবিদাওয়া উত্থাপন করে আসছিলেন এ বইটি মূলত তার লিখিত রূপ। এরদোয়ানের অত্যন্ত কঠিন ও প্রজ্ঞাপূর্ণ লেখাকে বাংলা ভাষায় প্রাঞ্জলভাবে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করাটাই মূল চ্যালেঞ্জ। আমি আমার ক্ষুদ্র সামর্থ্যরে সবটুকু ঢেলে দিয়ে কাজটি করার চেষ্টা করেছি, বাকিটা পাঠকরাই বিচার করবেন। মো. জয়নাল আবেদীন ইস্তানবুল, ১৯.১০.২০২২
Tk.
240
132
Tk.
650
585
Tk.
860
559
Tk.
275
206
Tk.
500
375
Tk.
850
638
Tk.
120
75
Tk.
36
27
Tk. 350